কী এই ওথেলো সিনড্রোম?
উইলিয়াম শেক্সপিয়ারের অন্যতম ট্র্যাজেডি ‘ওথেলো’ এর মূল চরিত্র ওথেলোর নামানুসারে এ রোগের নামকরণ করা হয়েছে। শেক্সপিয়ারের বিখ্যাত এ ট্র্যাজেডিতে ওথেলো তার সৎ এবং সুন্দরী স্ত্রী ডেসডেমনার পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়ার সন্দেহে তাকে হত্যা করে। পরে জানা যায়, তার সন্দেহ অমূলক ছিল। অযৌক্তিক সন্দেহপরায়ণতার এই মানসিক ব্যাধিকে এজন্যই দেওয়া হয়েছে ওথেলোর নাম। ব্রিটিশ মনোরোগ বিশেষজ্ঞ জন টড ১৯৫০ সালে ওথেলো সিনড্রোমের বিষয়টি প্রথম উত্থাপন করেন।
ওথেলো সিনড্রোম তথা প্যাথলজিকাল জেলাসি বলতে কোনোরকম যুক্তি ছাড়াই সঙ্গীর প্রতি মাত্রাতিরিক্ত সন্দেহপরায়ণতা এবং অবিশ্বাস এবং তা থেকে সৃষ্ট নানাবিধ সমস্যাকে বোঝায়। এতে সন্দেহের বশবর্তী হয়ে মানুষ অনলাইনে উত্যক্ত করা, আড়িপাতা থেকে শুরু করে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন, এমনকি খুন পর্যন্ত করে ফেলতে পারে। কিন্তু অধিকাংশ সময়েই দেখা যায় যে, ব্যক্তিটির সন্দেহ ভিত্তিহীন ছিল। এ মানসিক ব্যাধিতে মানুষ তার যৌক্তিকভাবে চিন্তা করার শক্তি হারিয়ে ফেলে, ঈর্ষা ও সন্দেহের দহনে সে অকল্পনীয় কাজ করতে বাধ্য হয়। নিজের প্রিয় মানুষটির ক্ষতি করতেও সে কুণ্ঠাবোধ করে না। অনেক সময় সে নিজের সন্তানদেরও ক্ষতি করে বসতে পারে।
কারা আক্রান্ত হয়?
১৯৯৮ সালে ক্যালিফোর্নিয়ায় একটি পরীক্ষায় দেখা গেছে, ওথেলো সিনড্রোমের ২০টি কেসের মধ্যে আক্রান্ত ১৯ জনই পুরুষ। নারীদের চেয়ে পুরুষদের মধ্যে এ ব্যাধি দেখা যায় বেশি। ওথেলো সিনড্রোমে আক্রান্ত ব্যক্তিদের শতকরা ৮০ ভাগই বিবাহিত। এ ব্যাধির কোনো নির্দিষ্ট বয়সসীমা নেই। ২৮ বছরের তরুণ থেকে শুরু করে থেকে ৭৭ বছর বয়সী বৃদ্ধের মাঝেও এ রোগের লক্ষণ দেখা গিয়েছে। সঙ্গীর প্রতি সহিংসতার ক্ষেত্রেও নারীর চেয়ে পুরুষের হার বেশি। হত্যা করার ক্ষেত্রেও পুরুষদের সংখ্যা বেশি। অনেক সময় দেখা যায় যে, আক্রান্ত ব্যক্তি সঙ্গীকে হত্যার পর আত্মহত্যা করে থাকে।
কেন দেখা দেয় এই সিনড্রোম?
ওথেলো সিনড্রোমের সঠিক কারণ জানতে এখনও বিস্তর গবেষণা চলছে। তবে ধারণা করা হয়, এর সম্ভাব্য কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে অবিশ্বাস, ব্যক্তির ভালোবাসা ঘাটতির বোধ, নিরাপত্তাহীনতা, আত্মবিশ্বাসের অভাব, অবলম্বন হারানোর ভীতি এবং তার জন্য সঙ্গীকে আঁকড়ে ধরে বাঁচার চেষ্টা।
অন্য আরো কিছু বিষয়ের সাথে ওথেলো সিনড্রোমকে সম্পর্কিত করা যায়। এর মধ্যে রয়েছে মাদকাসক্তি, ডিপ্রেশন, সিজোফ্রেনিয়া, পার্সোনালিটি ডিজঅর্ডার ও নানাবিধ মানসিক সমস্যা। ওথেলো সিনড্রোমের পেছনে এই বিষয়গুলো চলক হিসেবে কাজ করে থাকে। অনেকে আবার ওথেলো সিনড্রোমকে এসব রোগের লক্ষণও মনে করে থাকেন।
করনীয়
পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও বিশ্বাসের ভিত মজবুত হলে এই ধরনের সমস্যা সাধারণত হয় না, আর হলেও খুব সহজেই তা কাটিয়ে ওঠা যায়। অনেক সময় সিজোফ্রেনিয়া, ব্রেইন টিউমার অথবা পারকিনসন্স ডিজিজের রোগীদের মধ্যে এই সমস্যা দেখা যায়। আবার অ্যালকোহল বা কোকেনের মতো ড্রাগের ইফেক্ট হিসেবেও ওথেলো সিনড্রোম মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে। তাই এই ধরনের সমস্যা দেখা দিলে দ্রুত বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়াই উত্তম।
প্রিয়জনকে হারিয়ে ফেলার ভয় অস্বাভাবিক না। কিন্তু সেই ভয়ে যদি সম্পর্কই শেষ করে ফেলেন তাহলে কী করে হবে ভাবুন তো একবার! নিজের উপর বিশ্বাস রাখুন, নিজের ভালোবাসার মানুষটার উপর বিশ্বাস রাখুন। হৃদয়ের এই অদ্ভুত সুন্দর অনুভূতিকে উপেক্ষা করার সাধ্য কারোর নেই।