অবসেসিভ-কম্পালসিভ ডিসঅর্ডার
অবসেসিভ-কম্পালসিভ ডিসঅর্ডার

অনেকেই স্বভাবগতভাবে খুঁতখুঁতে প্রকৃতির। খাবার আগে থালাটা একবার পরিস্কার করে সন্তুষ্ট হন না অনেকে, দরজায় তালা লাগিয়ে বার দুয়েক টেনে নিশ্চিত হয়ে নিতে হয়, পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতার ব্যাপারে অন্যদের চেয়ে কিছুটা বেশী সতর্ক থাকেন। এসব ব্যক্তি চরিত্রের বৈশিষ্ট্য। তবে, এ ধরণের ব্যাপারগুলো যখন মাত্রাতিরিক্ত হয়ে পড়ে, অনেকক্ষণ সময় নষ্ট করে, দৈনন্দিন কাজ-কর্মে ব্যাঘাত সৃষ্টি করে তবে সেটি রোগের পর্যায়ে চলে গিয়েছে কি না তা পর্যালোচনার প্রয়োজন পড়ে। যে রোগটির কথা বলা হচ্ছে চিকিৎসা পরিভাষায় তাকে ‘অবসেসিভ-কম্পালসিভ ডিসঅর্ডার’ বা সংক্ষেপে ওসিডি বলা হয়।

অবসেশন হল এমন ধরনের চিন্তা বা দৃশ্য কল্পনা যা মনের ইচ্ছার বিরুদ্ধে মাথায় আসে। কমপালশন হল অবসেশন দ্বারা বাধ্য হয়ে, অস্বস্তি ও উদ্বেগ কমানোর জন্য যে কাজ করা হয়। এই সমস্যায় আক্রান্ত মানুষ অবসেশন (অনর্থক চিন্তার পুনরাবৃত্তি) এবং কম্পালসনের (সেই চিন্তা অনুযায়ী কাজ করার অদম্য ইচ্ছা) এক চক্রের মধ্যে আটকে পড়েন। যার ফলে এই রোগের কিছু কিছু বিরক্তির এবং কষ্টকর উপসর্গের কথা রোগীদের কাছে শোনা যায়। যেমন, কারো কারো বাইরে বের হলে বাসায় এসে গোসল করতেই হবে এবং কাপড় পাল্টাতে হবেই, যত বারই বাইরে যাওয়া হোক না কেন। কেউ কেউ বিশেষ কিছু প্রাণী যেমন কুকুর যদি পাশে দিয়ে হেটে যায়, গায়ে ছোঁয়া না লাগলেও তাকে গোসল করতে হবে। অনেকে স্বামী-স্ত্রী সহবাস থেকেও বিরত থাকেন, তাদের নোংরা লেগে যাবে এই ভয়ে। অনেক মা আছেন যারা নিজের সন্তানকে অন্য কেউ কোলে নিলেও গোসল করান বার বার। কেউ কেউ বার বার ঘরের ছিটকিনি/ লক চেক করেন। ঘুমোতে গিয়ে বার বার উঠে যান, দরজা ঠিক মতো লাগানো হয়েছে কিনা বার বার নিশ্চিত হন। তবুও শান্তি মিলেনা। অনেকে তার গোছানো টেবিল, বিছানা, ঘরের আসবাব কেউ একটু এলোমেলো করলে ভীষণ বিরক্ত হয়ে পড়েন। কলমদানীটি তার মতো করেই রাখতে হবে, একটুও নড় চড় করা যাবেনা। অনেকে আছেন বার বার টাকা গুনেন। ভুল হলো কিনা এই ভেবে ৫/৭ বার চেক করেন। ক্যাশিয়ার হিসেবে যারা কর্মরত তাদের অবশ্য এই গুন থাকাটা ভালো। কিন্ত রোগ বলবো আমরা তখনই, যখন সেটি তার এবং তার আশেপাশের লোকজনের কষ্টের কারন হয়ে দাঁড়ায়। ব্যাপারটা অমূলক বুঝেও যখন বিরত থাকতে পারেনা।

কি কারণে ও.সি.ডি. হয়?

ওসিডির মূল কারণগুলি হল:

  • মস্তিষ্কের রাসায়নিক দ্রব্যের ভারসাম্যহীনতা।
  • পারিবারিক ও বেড়ে ওঠার পরিবেশের প্রভাব।
  • মস্তিষ্কের বিভিন্ন অংশগুলির মধ্যে পারস্পরিক যোগাযোগের সমস্যা।
  • জিনগত প্রভাব।

 

ব্যবস্থাপনা

এই সমস্যায় নিম্নলিখিত ব্যবস্থাপনাসমুহ ফলপ্রসূ-

  • সাইকোলজিক্যালঃ সাইকোলজিক্যাল ব্যবস্থাপনার মধ্যে কগনিটিভ বিহেভিয়ার থেরাপি খুব উপকারী। এখানে রোগীর অবসেসিভ এবং কমপালসিভ চিন্তাগুলোর উপর কাজ করা হয়।
  • রেসপন্স প্রিভেনশন: এটির মাধ্যমে রোগী কই করে একই কাজ বার বার করা থেকে নিজেকে বিরত রাখবেন সেই টেকনিক প্রাকটিস করানো হয়।
  • থট স্টপিং: একটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে নেতিবাচক চিন্তাকে সাময়িক বন্ধ করার চেষ্টা করা হয়। এই প্রক্রিয়ায় ব্যক্তিকে হাতে একটি রাবার ব্যান্ড বেঁধে রাখতে বলা হয়। যখনই অমূলক চিন্তাগুলো আসবে তখন সে ব্যান্ডটিকে একটু জোরে টান দিয়ে ছেড়ে দিবে। ফলে তার হাতে ব্যথা অনুভূত হবে। এই ব্যথা তার মনোযোগ অন্য দিকে সরিয়ে দেবে।
  • ফার্মাকোলজিক্যালঃ এছাড়া রোগের তীব্রতা, ব্যপ্তিকাল এবং ধরন বিবেচনা করে মনঃচিকিৎসক বিভিন্ন ধরনের ওষুধ প্রদান করে থাকেন।

ওষুধ এবং থেরাপি একইসাথে চললে সবচেয়ে ভাল ফলাফল পাওয়া যায়।

সব সমস্যাই সাময়িক যদি আপনি সেখান থেকে বেড় হয়ে আসতে চান। ওসিডির ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম হয় না। সঠিক ব্যবস্থাপনা ও আত্মনিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে এই সমস্যা অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয় এবং এড়ানো যায় অনাকাঙ্ক্ষিত ভোগান্তি।

 

Moner Jotno