ভিডিও গেম আসক্তি
ভিডিও গেম আসক্তি

ভিডিও গেম আসক্তি, যা গেমিং ডিসঅর্ডার বা ইন্টারনেট গেমিং ডিসঅর্ডার হিসাবেও পরিচিত। সাধারণত ভিডিও গেইমের সাথে সরাসরি যুক্ত। গেইম খেলার কারণে যদি কোন ব্যক্তির লম্বা সময় ধরে কর্মক্ষমতা, উৎপাদনশীলতা ও নিত্যপ্রয়োজনীয় গুরুত্বপূর্ন কার্যাদী ব্যহত হয় এবং ব্যক্তি গেইম খেলার নেতিবাচক পরিণতি বিবেচনা না করে গেমিং এ নিযুক্ত থাকেন তখন বলা যেতে পারে যে সেই ব্যক্তি গেইমিং ডিজঅর্ডারে আক্রান্ত। এই ডিজঅর্ডারে ব্যক্তি না চাইতেও গেইম খেলার তাড়না অনুভব করবেন এবং সেই তাড়না নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ হন। যে কারণে নিজের বাকি সব কাজকর্ম রেখে তিনি ক্রমাগত গেইম খেলতে থাকেন।  

লক্ষণঃ

Diagnostic and Statistical Manual of Mental Disorders (DSM-5) এ ভিডিও গেমিংয়ের সমস্যার লক্ষণগুলি জানার জন্য একটি বিভাগ অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। আপনি অনলাইনে বা অফলাইনে গেইম খেলার ক্ষেত্রে এই লক্ষণগুলি দেখা দিতে পারে।

  • সব সময় বা বেশিরভাগ সময় গেমিংয়ের কথা ভাবছেন
  • খেলতে না পারলে খারাপ লাগছে
  • ভাল লাগার জন্য খেলে বেশি বেশি সময় ব্যয় করা হচ্ছে
  • ছাড়তে পারছেন না বা কম খেলতেও পারছেন না
  • আপনার পছন্দের অন্যান্য কাজ করতে চাইছেন না বা করতে ইচ্ছে হচ্ছে না
  • আপনার গেমিংয়ের কারণে কর্মক্ষেত্র, স্কুল বা বাড়িতে সমস্যা হচ্ছে
  • এই সমস্যা থাকা সত্ত্বেও খেলে যাচ্ছেন
  • আপনি খেলে কতটা সময় ব্যয় করেন সেটি আপনার কাছের মানুষদের কাছে লুকাচ্ছেন
  • খারাপ রাগ, দুঃখ, ক্ষোভ ইত্যাদি নেতিবাচক মনোভাব থেকে মুক্তি পেতে ক্রমাগত গেইম খেলছেন
  • আপনার ব্যক্তিগত সম্পর্কগুলো গেইম খেলার কারণে ব্যহত হচ্ছে
  • আপনার ঘুমের সমস্যা দেখা দিচ্ছে
  • পরিবার বা বন্ধুবান্ধবদের সাথে সময় না কাটিয়ে আপনি সেই সমটা গেইমের জন্য কাটাচ্ছেন

অবশ্য, প্রচুর গেইম খেলে এমন মানুষদের প্রত্যেকের এইসব সমস্যা দেখা দেয় না, তবে বিশেষজ্ঞরা বলেন যে প্রচুর গেইম খেললেই তাকে গেইমিং ডিজঅর্ডারের তকমা দেওয়াটা যৌক্তিক হবে না। তারা এই বিষয়ে একমত হয়েছেন যে ভিডিও গেমগুলিতে আসক্তির প্রস্তাবিত মানদণ্ড পূরণকারী খেলোয়াড়দের সংখ্যা খুবই কম। গেইমিং ডিজঅর্ডারে মেয়েদের তুলনায় ছেলেরা অনেক বেশি মাত্রায় আক্রান্ত হন।

চিকিৎসা

গেমিং ডিজঅর্ডারটি একটি নতুন শ্রেণিবিন্যাস, সুতরাং এখনও পর্যন্ত স্পষ্ট কোন চিকিৎসা পরিকল্পনা নেই। তবে এটি সম্ভবত জুয়া আসক্তির মতো অন্যান্য আসক্তিমূলক আচরণের চিকিৎসাও গেমিং ডিসঅর্ডারের জন্য প্রাসঙ্গিক হতে পারে।
Internet Gaming Disorder এর চিকিৎসা সম্পর্কিত  2017 এর সমীক্ষা অনুসারে, বিভিন্ন ধরণের চিকিৎসার সংমিশ্রণ করা উপকারী হতে পারে। গবেষণায় গবেষকরা নিম্নলিখিত চিকিৎসা ব্যবহার করেছেন:

  • সাইকোএডুকেশনঃ গেমিং আচরণ এবং মানসিক স্বাস্থ্যের উপর তার প্রভাব সম্পর্কে ব্যক্তিকে শিক্ষিত করা।
  • কগনিটিভ বিহ্যাভিয়ার থেরাপিঃ কগনিটিভ বিহ্যাভিয়ার থেরাপি ব্যক্তিকে অভিলাষ নিয়ন্ত্রণ করতে, অযৌক্তিক চিন্তাগুলি মোকাবেলা করতে এবং সমস্যা সমাধানের কৌশলগুলি শিখতে সহায়তা করে।
  • ইন্ট্রাপার্সোনালঃ এই পদ্ধতিটি মানুষকে তাদের পরিচয় অন্বেষণ করতে, আত্মসম্মান তৈরি করতে এবং তাদের সংবেদনশীলতা বাড়িয়ে তুলতে সহায়তা করে।
  • আন্তঃব্যক্তিগতঃ এই পদ্ধতিতে ব্যক্তি কীভাবে অন্যের সাথে যোগাযোগের দক্ষতা এবং দৃঢ়তা নিয়ে কাজ করে তা শিখতে পারবে।
  • পরিবারের হস্তক্ষেপঃ গেমিং ডিসঅর্ডার যদি অন্যের সাথে সম্পর্কের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে তবে পরিবারের সদস্যদের থেরাপির কিছু অংশে শামিল হতে হবে।
  • একটি নতুন জীবনধারা বিকাশঃ অতিরিক্ত গেমিং প্রতিরোধ করার জন্য, একজন ব্যক্তির নিজের কর্মদক্ষতা  অন্বেষণ করা প্রয়োজন, নিজের জন্য লক্ষ্য নির্ধারণ করা  এবং গেমিংয়ের বাইরে যেসব কাজ সে উপভোগ করে তা অনুসন্ধান করা উচিত।

যেকোন ধরনের আসক্তিই মানসিক এবং শারিরীক স্বাস্থ্য উভয়ের জন্যই হুমকিস্বরূপ। সুতরাং বিনোদনের জন্য অল্পবিস্তর গেইম খেললেও খেয়াল রাখতে হবে আপনার নিজের জীবনের রিমোট টি যেন গেইমের হাতে চলে না যায়।

Moner Jotno