স্ক্রিন আসক্তি
স্ক্রিন আসক্তি

Screen Addiction is when screen use becomes so compulsive that it leads to impaired daily functioning in terms of productivity, social relationships, physical health, or emotional well-being (Horwood & Anglim, 2018)। অর্থাৎ, তখনই কাউকে স্ক্রিন আসক্ত বলা হয় যখন স্ক্রিনের ব্যবহার তার জীবনে এতটা বাধ্যতামূলক হয়ে যায় যে স্ক্রিন টাইম তার উৎপাদনশীলতা, সামাজিক সম্পর্ক, শারীরিক স্বাস্থ্য বা মানসিক সুস্থতার দিক থেকে দৈনিক ক্রিয়াকলাপকে বাধাগ্রস্থ করে তোলে। এখন স্ক্রিন টাইম আসলে কি? স্ক্রিন টাইম হল স্মার্টফোন, কম্পিউটার, টেলিভিশন বা ভিডিও গেম কনসোলের মতো স্ক্রিনের সাহায্যে কোনও ডিভাইস ব্যবহার করে ব্যয় করা সময়ের পরিমাণ। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে যে মাত্রাতিরিক্ত স্ক্রিন টাইম সরাসরি শিশুর বিকাশ এবং মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যের উপর প্রভাব ফেলে।

 

এটা কি আসলেই আসক্তি?

তিনটি প্রধান আচরণ রয়েছে যা আসক্তি চিহ্নিত করতে সহায়তা করে, 

  1. অভিলাষ বা ইচ্ছে 
  2. সহনশীলতা 
  3. প্রত্যাহার

অভিলাষ বা ইচ্ছে এমন জিনিস যা আমাদের সকল সময়ে হয়। আপনার চকোলেট বা আইসক্রিমের প্রতি আকুলতা থাকতে পারে এবং আপনি যদি জানেন যে আপনি যদি সেগুলির জন্য আগ্রহী হন তবে এই জিনিসগুলি প্রতিরোধ করা কতটা কঠিন! আপনি ইতিমধ্যে এই লক্ষণগুলির কিছুটা চিনতে পারবেন। খেয়াল করে দেখবেন যে আপনি ধীরে ধীরে স্ক্রিনে সময় কাটাতে আগ্রহী হতে থাকেন, প্রায়শই আপনার ইচ্ছে হয় অন্যান্য কাজ ফেলে দিনের বেশিরভাগ সময়টাই স্ক্রিনের সামনে বসে কাটিয়ে দেবার।

 

সহনশীলতা হল যখন আপনার সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য ব্যয় করা সময়ের পরিমান আস্তে আস্তে বৃদ্ধি পাওয়া। উদাহরণে বলা যায়, মনে করুন আপনি সোশ্যাল মিডিয়ায় ২০ মিনিট ব্যয় করতে পেরে সন্তুষ্ট হয়ে যান। কিন্তু ধীরে ধীরে সময়ের সাথে আপনি দেখতে পেয়েছেন যে একই পরিমান সন্তুষ্টি বোধ অর্জন করার জন্য আপনার এখন আর ২০ মিনিটে হচ্ছে না, আরও বেশি বেশি সময় ব্যয় না করলে আপনার সেই সন্তুষ্টি অনুভূত হচ্ছে না। 

 

সবশেষে, প্রত্যাহার। প্রত্যাহার প্রায়শই আন্দোলন, ক্রোধ, হতাশা এবং অন্যান্য নেতিবাচক লক্ষণগুলির মতো অনুভূতির সাথে যুক্ত হয়। আপনি নিজেকে স্ক্রিনের সামনে থেকে সরিয়ে নেবার ক্ষেত্রে মেজাজ এবং আচরণে একরকম পরিবর্তন লক্ষ্য করবেন। আপনি স্ক্রিন টাইম কমানোর চেষ্টা করামাত্রই আপনার মেজাজ খিটিখিটে, রাগ, ক্রোধ, বিরক্তি এই ধরনের নেতিবাচক অনুভূতির পরিমান বৃদ্ধি পেতে থাকবে যার ফলশ্রুতিতে আপনি আর স্ক্রিন টাইমের পরিমান উল্লখযোগ্য হারে কমাতে বারবার ব্যর্থ হবেন।

আপনার স্ক্রিনের প্রতি যদি এই ধরণের অনুভব লক্ষ্য করেন তবেই বুঝতে হবে আপনি স্ক্রিন আসক্ত। 

 

লক্ষণ

  1. স্ক্রিন টাইম আপনার দৈনন্দিন ক্রিয়াকলাপে হস্তক্ষেপ করে।
  2. আপনি বাস্তবতায় বন্ধু বা পরিচিতজনের সাথে সময় কাটানোর চাইতে ভার্চুয়াল বন্ধুদের সাথে বেশি সময় ব্যয় করছেন।
  3. স্ক্রিন ই হচ্ছে একমাত্র প্রধান মাধ্যম যা আপনাকে আনন্দ দেয়।
  4. স্ক্রিন টাইম পারিবারিক সমস্যার প্রধান কারণ।
  5. আপনি নিজেক আরও বেশি সময় ধরে অনলাইনে রাখছেন।
  6. আপনার কাজের মান ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে।
  7. বাসায় ফোন রেখে দিলে আপনি উদ্বেগ বোধ করেন।
  8. আপনি খুব কম শারীরিক পরিশ্রম বা ব্যায়াম করেন।
  9. পরিবার এবং বন্ধুরা আপনার অনলাইনে ব্যয় করা সময়ের পরিমাণ নিয়ে অভিযোগ করে।
  10. আপনি চেষ্টা করেও স্ক্রিন টাইমের পরিমান কমাতে ব্যর্থ হচ্ছেন।

 

প্রতিকার

  1. স্ক্রিনে সময় দেবার জন্য নির্দিষ্ট সময় নির্ধারণ করা।
  2. নির্ধারিত সময়ের বাইরে স্ক্রিন ব্যবহার না করা। 
  3. বাসায় স্ক্রিন মুক্ত বিচ্ছিন্ন জায়গা তৈরি করা যেখানে স্ক্রিন জাতীয় কোন জিনিস নিয়ে প্রবেশ করা যাবে না।
  4. নির্দিষ্ট লক্ষ্য অর্জনে পুরস্কার প্রথা চালু করা।
  5. প্রযুক্তিগত ব্যবহার কম করা বাইরের কার্যক্রম বেশি করা (যেমনঃ খেলাধুলা, বাইরে হাঁটা ইত্যাদি)
  6. Social Media এর ব্যবহার কমিয়ে আনা 
  7. বই পড়ার অভ্যাস করা।
  8. ভার্চুয়াল জগতের বন্ধুদের চাইতে বাস্তবে পরিবার ও বন্ধুদের বেশি সময় দেয়া।

সবকিছুর পরেও যদি আপনার মনে হয় আপনি এই চক্র থেকে বের হতে পারছেন না, তবে দ্রুত বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে। 

স্ক্রিনের ব্যবহার প্রযুক্তির একটি অংশ। এর ব্যবহারে আমাদের সচেতন থাকতে হবে। আমরা অবশ্যই স্ক্রিন ব্যবহার করব কিন্তু খেয়াল রাখব যে স্ক্রিন যেন আমাদের জীবনের নিয়ন্ত্রণ না নিয়ে ফেলে। তবেই প্রযুক্তির সঠিক এবং যৌক্তিক সুফল আমাদের বাস্তব জীবনে ধরা দেবে।

Moner Jotno