সেলফ এস্টিম (প্রথম পর্ব)
সেলফ এস্টিম (প্রথম পর্ব)

Self-Esteem কি?
Self-esteem কথাটির অর্থ খুজতে গেলে বাংলা শাব্দিক অর্থ হিসেবে যা যা পাওয়া যায় তা হলো - “আত্মসম্মানবোধ”, “আত্মমর্যাদা”, “আত্মবিশ্বাস” অথবা এই ধরনেরই কিছু। তবে সেলফ–এস্টিম কথাটির অর্থ এককথায় এভাবে বলা যায় না।

বিশেষজ্ঞদের মতে, সেলফ-এস্টিম হলো একটি মানুষের তার নিজের সম্পর্কে সার্বিক ধারণা অথবা বিচার-বিবেচনা। নিজের সম্পর্কে এই সার্বিক ধারনাটিই জীবনে চলার পথে আমাদের প্রতিটি কাজকে প্রভাবিত করে থাকে যা হয়তো আমরা টেরই পাইনা।

আসুন বিশেষজ্ঞদের দেওয়া কিছু সংজ্ঞা জেনে নেই –

Self-esteem refers to a person’s overall sense of his or her value or worth. It can be considered a sort of measure of how much a person “values, approves of, appreciates, prizes, or likes him or herself” (Adler & Stewart, 2004)

সেলফ-এস্টিম বিশেষজ্ঞ মরিস রযেনবারগ এর মতে - Self-esteem is quite simply one’s attitude toward oneself (1965). তিনি এটিকে এভাবে বর্ণনা করেছেন - “favorable or unfavorable attitude toward the self”

উপরের সংজ্ঞা গুলো থেকে এটা বোঝা যাচ্ছে যে – আমি নিজেকে কতটুকু মূল্য দিচ্ছি, নিজেকে কতটুকু পছন্দ করে কতটুকু পুরস্কৃত করছি এবং নিজেকে কতটুকু সম্মান দিচ্ছি এই বিষয়গুলোর সমন্বয়ই সেলফ-এস্টিম। এটি নিজের প্রতি নিজের দৃষ্টিভঙ্গি; আমরা নিজেকে মানসিকভাবে যাচাই করে এই সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকি যে নিজেকে কীভাবে দেখবো। কথাগুলো শুনতে অথবা পড়তে জটিল অথবা সহজ মনে হতে পারে কিন্তু আমাদের নিজেদের সেলফ-এস্টিম গড়ে উঠার এই প্রক্রিয়াটি আমাদের সচেতন মনে অথবা সজ্ঞানে হয় না। আমাদের জীবনের বিভিন্ন ঘটনার অথবা অভিজ্ঞতার ফলে অবচেতন মনেই আমাদের সেলফ-এস্টিম গঠিত ও বিকশিত হয়ে থাকে। নিম্ন বা নেতিবাচক সেলফ-এস্টিম যেমন ক্ষতিকর, উচ্চ সেলফ-এস্টিম বা নিজের সম্পর্কে অতিরিক্ত অবাস্তব ধারণা পোষণ করাও অস্বাভাবিকতার লক্ষণ।

 

সেলফ-এস্টিম এবং সেলফ-কনফিডেন্স?

এই দুটি কথার মাঝে হাল্কা পার্থক্য রয়েছে যা আমরা প্রায়ই এক করে ফেলি। Self-confidence হল ব্যক্তির নিজের স্বীয়ক্ষমতা (ability) সম্পর্কে ধারণ যা পরিস্থিতি অনুযায়ী পরিবর্তন হয়ে থাকে। সেলফ কনফিডেন্স এক এক কাজে এক এক রকম হতে পারে (যেমন আমি রান্না করতে কনফিডেন্ট বোধ করি কিন্তু সবার সামনে কথা বলতে কনফিডেন্ট না...) কিন্তু সেলফ-এস্টিম বরাবরই একই থাকে (যা অবশ্যই বিভিন্ন অনুশীলন বা সাইকোথেরাপির মাধ্যমে বাড়ানো যায়)। আমরা যখন নিজেকে ভালবাসি তখন আমাদের সেলফ-এস্টিম বা নিজের সম্পর্কে সার্বিক ধারনা/বিচার বিবেচনা ইতিবাচক থাকে এবং ফলে সব পরিস্থিতে আমাদের আত্মবিশ্বাস মোটামোটি একই রকম থাকতে সাহায্য করে।  

 

নিম্ন সেলফ এস্টিম (Low Self-Esteem) তৈরি হওয়ার কারণ -

এটি সরাসরি বলে দেওয়া যায় না যে এই নির্দিষ্ট কারনেই একজন নিম্ন সেলফ এস্টিম নিয়ে বড় হয়েছে। কারণ এর পিছনে বিভিন্ন ধরণের কারণ থেকে থাকে এবং এক একজনের জন্যে কারণ ভিন্ন হতে পারে (যা কাউন্সেলিং বা সাইকথেরাপির মাধ্যমে খুজে বের করা যায়)। বিশেষজ্ঞদের মতে যে বিষয়গুলো সেলফ-এস্টিম কে প্রভাবিত করে থাকে অথবা তা তৈরির পিছে ভুমিকা রাখে সেগুলো হলো – মানুষের ব্যাক্তিত্ব, ছোটবেলার বিভিন্ন অভিজ্ঞতা, বিভিন্ন ঘটনা, বয়স, স্বাস্থ্য, অন্যদের সাথে তুলনা, প্রিয়জনদের আচরণ, পারিবারিক গঠন ইত্যাদি। একটি গুরুত্বপূর্ণ এবং মজার বিষয় হলো সেলফ-এস্টিম কখনই স্থায়ী নয়, বরং এটি পরিবর্তনশীল ও উন্নতিশীল।

 

নিম্ন সেলফ-এস্টিম (Low Self-Esteem) এর ফলাফল কি হতে পারে

কেউ যদি তার জীবন এর বিভিন্ন অভিজ্ঞতার কারণে নিম্ন সেলফ এস্টিম নিয়ে বেড়ে ওঠে তাহলে দেখা যায় তার জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রেই তার প্রভাব পড়ছে। যেকোনো কাজ করতে গেলে অথবা যেকোনো সম্পর্কের মাঝে তার কিছু চিন্তা ভাবনা প্রবলভাবে কাজ করে যেমনঃ “আমাকে কেউ ভালবাসে না”; “আমাকে দিয়ে কিছু হবে না”; “অন্যরা পারে, আমি পারি না”; “আমি দুর্বল”; “আমার সবার কাছে প্রিয় হতেই হবে” ইত্যাদি। এই চিন্তা ভাবনা গুলো খুব সজ্ঞানে হয়তো ধরা দেয় না কিন্তু একটু ভেবে দেখলেই দেখা যাবে আমরা নিজের সম্পর্কে এই ধরণের ধারণা পোষণ করে থাকি (নিম্ন সেলফ এস্টিম এর কারণে)।

বিভিন্ন মনবৈজ্ঞানিক তত্ত্ব অনুসারে, আমরা একটি পরিস্থিতি, ঘটনা বা মানুষকে যেভাবে দেখি বা যেভাবে চিন্তা করি তার পরিপ্রেক্ষিতেই আমাদের আবেগ তৈরি হয় এবং সেই চিন্তা ও আবেগ দ্বারা চালিত হয়ে আমরা আচরণ করে থাকি। সুতরাং আমরা যদি নিজের সম্পর্কে সবসময় নেতিবাচক ধারণা রাখি, নিজেকে নিচু করে দেখি, তাহলে আমাদের বিভিন্ন কাজ কর্মেও তার প্রভাব পরে থাকে। যেমনঃ যেকোনো কাজে হয়তো আমরা হেরে যাওয়া বা না পারার ভয়ে কাজটি করার সাহস পাই না (করলেও খুব একটা ভালো হয়না হয়তো, ফলে আত্মবিশ্বাস আরও কমে যায়) – এর পেছনে আমাদের সেই নিম্ন সেলফ এস্টিম বা নিজের সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা গুলোই কাজ করে। আবার বিভিন্ন সম্পর্কের ক্ষেত্রেও আমাদের ভিতরে নিজেকে নিয়ে এরকম নেতিবাচক ধারণার কারণে সম্পর্কে জটিলতার সৃষ্টি হয়ে থাকে।

 

বিভিন্ন কারণে আমাদের নিজেদের মধ্যে নিজের সম্পর্কে যে ধারণা তৈরি হয় সেটি নেতিবাচক হয়ে থাকলে তা আমাদের জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্র কে নানা ভাবে প্রভাবিত করে এবং এক পর্যায়ে আমাদের মাঝে হতাশা, বিষন্নতা তৈরি করতে পারে। তাই নিজের সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা কে বিভিন্ন চর্চার মাধ্যমে ইতিবাচক করা জরুরী। কি কি উপায়ে সেলফ এস্টিম উন্নত  বা ইতিবাচক করা সম্ভব তা সম্পর্কে আমাদের পরবর্তী লেখায় জানতে পারবেন। এছাড়াও প্রয়োজনে বিশেষজ্ঞের সাথে যোগাযোগ করে নিয়মিত সাইকোথেরাপি নিতে পারেন।

  

 

Moner Jotno