সেলফ এস্টিম (দ্বিতীয় পর্ব)
সেলফ এস্টিম (দ্বিতীয় পর্ব)

আমাদের পূর্ববর্তী লেখায় আমরা জেনেছিলাম – সেলফ-এস্টিম কি? সুস্থ সেলফ-এস্টিম তৈরি হওয়ার গুরুত্ব ও নিম্ন সেলফ-এস্টিম এর ফলাফল। আরও গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় হলো সেলফ-এস্টিম বৃদ্ধি বা উন্নতি করা সম্ভব সাইকোথেরাপি এবং নিয়মিত কিছু অনুশীলন চর্চার  মাধ্যমে। মনে রাখবেন একজন মানুষের সেলফ-এস্টিম যেমন একদিনে গড়ে উঠে না তেমনি পরিবর্তন ও একদিন এ সম্ভব নয়, প্রয়োজন নিয়মিত এবং পর্যাপ্ত চেষ্টা।

নিজের সম্পর্কে ধারণার উন্নতি করার কিছু সাধারণ উপায় -

বিভিন্ন কারণে আমাদের নিজেদের মধ্যে নিজের সম্পর্কে যে ধারণা তৈরি হয় সেটি নেতিবাচক হয়ে থাকলে তা আমাদের জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্র কে নানা ভাবে প্রভাবিত করে এবং এক পর্যায়ে আমাদের মাঝে হতাশা, বিষন্নতা বা কোন মানসিক অসুস্থতা তৈরি করতে পারে। তাই নিজের সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা কে বিভিন্ন চর্চার মাধ্যমে ইতিবাচক করা জরুরী। ফলে আমাদের জীবনে সার্বিক কল্যাণ আসা সম্ভব হবে। আমরা নিম্নের বিষয় গুলো নিয়মিত চর্চা করতে পারি -

  • ইতিবাচক চিন্তা করার চেষ্টা করা; বাস্তবিক ভাবেই জীবনে যেমন ইতিবাচক অনেক দিক আছে তেমনি নেতিবাচক বিষয়ও থাকে সবার জীবনে। এই চর্চা টি করার সময় আমরা শুধু মাত্র আমাদের জীবনের ইতিবাচক দিক গুলোই খুজে বের করে তা নিয়ে ভাবার চেষ্টা করবো এবং এর মাধ্যমে ইতিবাচক ভাবনার চর্চা করবো। ইতিবাচক ভাবনা বলতে কোন বিষয়ের বা ঘটনার ইতিবাচক দিক গুলো খুজে বের করার চেষ্টা করা।
     
  • নিজের গুনাগুণ গুলো খুজে বের করে একটি তালিকা তৈরি করা; নিজের ভালো দিক গুলো তে নজর দেওয়া এবং নিজের গুনাগুণ গুলো কে আরও পরিচর্যা করা; আমি আমার তালিকায় আরও কি কি গুন যোগ করতে চাই সেগুলো তালিকাবদ্ধ করা এবং চর্চা শুরু করা।
     
  • নিজের ভুল গুলো খুজে বের করে সংশোধন এর চেষ্টা করা; মনে রাখতে হবে সব মানুষেরই যেমন গুণাবলী আছে তেমনি কিছু আচরণ থাকতে পারে যেগুলো নিজের বা অন্যের জন্যে উপকারী নয়। এবং সেগুলো সংশোধন করা প্রয়োজন হয়ে থাকে। সেগুলো সম্পর্কে যদি আমরা সচেতন না হই তাহলে না জেনে আমরা এমন কাজ করে যেতে থাকি যা সমালোচনীয় হতে পারে। তাই সচেতন হয়ে সেগুলো নিয়ে কাজ করা দরকার।
     
  • নিজের সক্ষমতা এবং অপারগতা সম্পর্কে জ্ঞাত থাকা; আমি কি পারি বা পারবো এবং কি পারি না বা পারবো না – সেগুলো সম্পর্কে পরিস্কার ধারণা রাখা; একটি তলিকা তৈরি করা যেতে পারে যা নিজেকে জানতে সাহায্য করে। নিজেকে যত পরিষ্কারভাবে জানতে পারবো ততই নিজের প্রতি বিশ্বাস দৃঢ় হবে। এখানে বিশেষ ভাবে মনে রাখতে হবে যে একজন মানুষ সব কিছু পারে না, তাই অন্যদের সাথে নিজেকে তুলনা করে অবাস্তব প্রত্যাশা তৈরি করে নিজেকে ছোট অনুভব করাটা কাজের না। সবারই সক্ষমতার পাশাপাশি কিছু না পারাও থাকে।
     
  • নিজের জন্যে বাস্তবিক লক্ষ্য নির্ধারণ করা এবং সে অনুযায়ী এগিয়ে যাওয়া; নিজের পরিস্থিতি ও সক্ষমতা অনুযায়ী নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে যা অর্জন করা সম্ভব এমন পদক্ষেপ নিয়ে লক্ষ্যের দিকে অগ্রসর হওয়া।
     
  • নিজের সম্পর্কে অন্যদের মতামত কে বেশি গুরুত্ব না দিয়ে সমালোচনা গুলো কে ইতিবাচক ভাবে নেওয়া; কেও কোন সমালোচনা করলে তা বিশ্বাস করে ফেলা বা উপেক্ষা করা – কোনটাই উপকারী নয়। ভেবে দেখা যেতে পারে যে আসলেই তাই কিনা; যদি সত্য হয় সংশোধন করি, আর যদি সঠিক না হয় তাহলে “অন্যের মতামত” কে শুধুমাত্র “অন্যের মতামত বা ধারণা” হিসেবেই দেখি।
     
  • নিজের সম্পর্কে অন্যদের অপ্রয়োজনীয় বা অসামাঞ্জস্য কথা গুলো কে উপেক্ষা করতে শিখা
     
  • সব সময় অন্যের সমালোচনা করা থেকে বিরত থাকা
     
  • নিজের সম্পর্কে ধারণা গুলো যাচাই করে দেখা – আসলেই সেগুলো সত্য বা যৌক্তিক কিনা; নাকি এগুলো আমার ধারণা মাত্র।
     
  • জীবনে উত্থান পতন আসতেই পারে, নেতিবাচক ঘটনা ঘটতেই পারে, তার মানে এই নয় যে এটিই জীবন অথবা এখানেই জীবন শেষ - তা মাথায় রাখা;
     
  • নিয়মিত খাওয়া-দাওয়া, ঘুম, বিশ্রাম ও শারীরিক চর্চার কোন বিকল্প নেই – শরীর সুস্থ থাকলে মন ভালো থাকবে আবার মন ভালো থাকলে শরীরও ভালো থাকবে।
     

এই বিষয় গুলো আমরা নিয়মিত চর্চা করতে পারলে নিজের সম্পর্কে একটি ইতিবাচক ধারণা নিয়ে সুস্থভাবে জীবনযাপন করতে পারি। এছাড়াও আপনারা মনোরোগ বিশেষজ্ঞ (Psychiatrist) বা সাইকোলজিস্ট (Psychologist)-এর সাথে যোগাযোগ করে সাইকোথেরাপি নিতে পারেন। কগনিটিভ বিহেভিয়ার থেরাপি গবেষণা দ্বারা স্বীকৃত একটি সাইকোথেরাপি প্রক্রিয়া যা বিভিন্ন মানসিক সমস্যার চিকিৎসাসহ আত্মবিশ্বাস, সেলফ-এস্টিম ইত্যাদি গঠন করতেও বেশ কার্যকর।

Moner Jotno