প্রতিদিনের প্রাত্যহিক জীবনে আমাদের অসংখ্য অজস্র কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকতে হয়। এর মধ্যে নিজের জন্য একটু আলাদা করে সময় বের করা প্রায় অসম্ভব একটা ব্যপার। কিন্তু নিজেকে সময় দেওয়া এবং নিজের জন্য কিছুটা সময় আলাদা করে রাখা বা প্রতিদিন নিজের ভালোলাগার কিছু কাজ করা একান্ত জরুরী। ব্যস্ত জীবনের ফাঁকে ফাঁকে নিজের যত্নমূলক কিছু কাজ করার অভ্যাস তৈরি করা খুবই জরুরী। কারণ এই কাজগুলো আমাদেরকে মানসিক ও শারীরিকভাবে সুস্থ এবং কর্মক্ষম রাখতে সাহায্য করে। নিজের যত্ন নেওয়ার এবং কিছু পরিমাণে আনন্দদায়ক কাজ করার মাধ্যমে আমাদের উদ্যম ও প্রফুল্লতা বৃদ্ধি পায় এবং মানসিকভাবে ক্লান্ত ও অবসাদগ্রস্থ হয়ে পরার সম্ভাবনা কমে।
সুতরাং আনন্দদায়ক এবং নিজের যত্নমূলক কাজ শারীরিক এবং মানসিক সুস্থতার জন্য একটি অতি প্রয়োজনীয় এবং অবিচ্ছেদ্য একটি অংশ।
আমরা সাধারণত নিজের যত্ন নেয়ার ক্ষেত্রে ৬ টি ভাগের কথা মনে রাখতে পারি। নিজের পুরোপুরি যত্ন নেয়া তখন ই সম্ভব হবে যখন আমরা এই ৬ টি ক্ষেত্রেই সমান ভাবে গুরুত্ব দিতে পারবো।
১। শারীরিকঃ আমরা অনেক সময় মাথা ব্যথা হলেও সেটাকে তেম্লন গুরুত্ব দেই না। ভাবি যে ঠিক হয়ে যাবে। অথবা দীর্ঘদিন ধরে হয়তো হাঁটুতে ব্যথা। কিন্ত ডাক্তার দেখায় না অনেকেই। ভাবে বয়স হলে এসব একটু হয় ই। কিন্তু নিজের শরীরের নেয়া কিন্তু নিজের সার্বিক যত্ন নেয়ার ই অংশ। তাই সেলফ কেয়ার করতে গিয়ে অবশ্যই নিজের শরীরের যত্ন নিতে হবে।
২। মানসিকঃ শরীরের সাথে সাথে নিজের মানসিক স্বাস্থ্যের দিকে লক্ষ্য রাখাও অনেক বেশি দরকার। কাজের চাপ, পরিবারের চাপ যদি সামলাতে সমস্যা হয় তাহলে অবশ্যই একজন মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের সরনাপন্ন হতে হবে। এছাড়াও নিজের মন ভাল রাখতে নিজের কাজ গুলোর উপর নজর রাখা যেতে পারে। নিজের করতে ভালো লাগে এমন কোনো কাজ করা যেতে পারে। নিজের পজিটিভ গুনগুলো খাতায় লিখে ফেলা, সাপোর্ট গ্রুপে অংশ নেয়া এসব করেও নিজের মনের যত্ন নেয়া যায়।
৩। আবেগীয়ঃ আমাদের একটি প্রধান যত্নের জায়গা হলো আবেগের যত্ন নেয়া। আমরা সাধারণত সব সময় নিজের সমালোচনা করতে অভ্যস্ত। নিজের আবেগের যত্ন নিতে তাই সবার আগে নিজেকে “হ্যাঁ সূচক” বাক্য বলতে হবে। নিজের কঠোর সমালোচনা না করে, নিজের ভালো দিকের প্রতি নজর দিতে হবে। হাসির কোনো সিনেমা দেখা যেতে পারে অথবা নিজেকে কোনো গিফট দেয়া যেতে পারে।
৪। ব্যক্তিগতঃ জীবনে কি করতে চাই, নিজের লক্ষ্য নির্ধারণের প্রতি নজর দেয়া ও নিজের যত্ন নেয়ার অংশ। প্রতি দিন পর্যাপ্ত পরিমান পানি পান করা এমন কি দৈনিক ৮ ঘণ্টা ঘুমানো ও নিজের যত্ন নেয়ার অন্তর্ভুক্ত। নিজের চারপাশে একটা নিরাপদ পরিবেশ তৈরি করাও নিজের খেয়াল রাখার মদ্ধ্যেই পরে। আমরা বেশিরভাগ সময় “না” বলতে পারি না। তাই “না” বলার চর্চা করেও কিন্তু ব্যক্তিগত ভাবে নিজেকে চাপমুক্ত রাখা যায়। এমন কি অনেক সময় কারো কাছ থেকে কোনো কিছু দরকার করে সেই হেল্প সিক করা নিয়েও অনেকে হীনমন্যতায় ভুগেন। সেটাও কিন্তু নিজের যত্ন নেয়া ই। তাছাড়া, একদিন কিছু না করে শুধু ঘরে শুয়ে বিশ্রাম করাটাও নিজের ব্যক্তিগত পরিচর্যার অন্তর্ভুক্ত।
৫। প্রফেশনালঃ কাজের ক্ষেত্রে অনেক সময় নিজের যত্ন নেয়া হয়ে উঠে না। অনেক সময় আমরা কাজের সময় ঠিক মত লাঞ্চ ব্রেক টাও নেই না। কিন্তু কাজের সময় এই বাউন্ডারি গুলো সেট করা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। অফিসের কোনো কাজ বাসায় না নেয়া। অফিসের কাজ অফিসেই শেষ করা। মাঝে মাঝে অবশ্যই ভেকেশন এ যাওয়া এবং সিক লিভ নেয়াও নিজের যত্নের অংশ।
৬। আধ্যাতিকঃ যে যে ধর্মের অনুসারী তার তার ধর্মীয় কাজ পালন করেও নিজের যত্ন নেয়া যায়। অনেক সময় মেডিটেশন করা যেতে পারে। আবার অন্যকে ক্ষমা করে দেয়ার মাধ্যমেও আত্ত্বিক শান্তি লাভ করা যায়।
উপরিউক্ত উপায়ে নিজের যত্ন নেয়া যেতে পারে।