সিজোফ্রেনিয়া একটি গুরুত্বর মানসিক ব্যাধি। এটাকে অনেক ক্ষেত্রে মানসিক রোগের ক্যান্সারও বলা হয়ে থাকে। সিফ্রেনিয়া হলে ব্যাক্তির চিন্তা, আচরন ও প্রত্যক্ষণে অস্বাভাবিকতা দেখা যায়। আসেপাশের পরিবেশের প্রতি ব্যাক্তির মনোভাব প্রতিবর্তিত হয় এবং তাঁর মধ্যে একধরনের ভ্রান্ত বিশ্বাস তৈরী হয়। সিজোফ্রেনিয়াতে প্রধানত দুই ধরনের লক্ষণ দেখা যায়ঃ
১। পজিটিভ লক্ষনঃ কিছু কিছু লক্ষণ নতুন করে দেখা দেয় যা সাধারন বৈশিষ্ট্যের বাইরে এগুলোকে বলা হয় পজিটিভ লক্ষন।
২। আরো কিছু লক্ষণ থাকে যা স্বাভাবিক মানুষের মধ্যে দেখা যায় তবে সিযফ্রেনিয়া হলে ওগুলো কমে যায়। এগুলে কে নেগেটিভ লক্ষন বলে।
পজিটিভ লক্ষণঃ
- এমন কিছু জিনিস উপলব্ধি করা যা আসলে নাই বা হ্যালুসিনেশন
- মিথ্যা/ভ্রান্ত এবং স্থির বিশ্বাস বা ডিলিউশন
- বিভ্রান্ত চিন্তাভাবনা।
- বিশৃঙ্খল আচরণ
- মনোনিবেশ করতে সমস্যা
নেগেটিভ লক্ষণঃ
- পূর্বের তুলনায় উল্লেখযোগ্য মাত্রায় আবেগীয় প্রকাশ
- সামাজিক মিথস্ক্রিয়া হ্রাস পায়
- যোগাযোগ ও কথা বলা হ্রাস পায়
- আগ্রহ হ্রাস পায়
মিথ্যা স্থির বিশ্বাস বা ডিলিউশনঃ এমন একধরনের ভ্রান্ত বিশ্বাস থকে যা বাস্তবতার সাথে কোনাবেই মিলে না। এগুলোকে ডিলিউশন বলা হয়। যেমনঃ
- কেউ কেউ মনে করেন তাঁর বড় কোন ক্ষমতা বা সুপার পাওয়ার আছে। যেমনঃ কেউ মনে করে যে সে বাতাস কে নিয়ন্ত্রন করতে পারে।
- কেউ কেউ বিশ্বাস করেন যে কেউ তাঁর ক্ষতি করার চেষ্টা করছে। অন্যরা কথা বললে মনে করেন যে তাকে নিয়ে কথা বলা হচ্ছে।
- কেউ কেউ তাদের পরিবারে সদস্য বা প্রিয়জন যেমন, স্বামী বা স্ত্রীকে সন্দেহ করতে থাকেন। অনেকেই বিশ্বাস করেন তাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। যেমনঃ তাঁর ক্ষতি করার তাঁর স্বামী বা স্ত্রী খাবারে বিষ মিশিয়ে দিয়েছে।
- আবার অনেকে বিশ্বাস করেন এ সে অনেক বড় সেলিব্রেটি বা কোন সেলিব্রেটি তাকে পছন্দ করে।
এধরনের আরোও অনেক ভ্রান্ত বিশ্বাস বা ধারনা সিজোফ্রেনিয়ে আক্রান্ত ব্যক্তির মধ্যে দেখা যায়। বর্তমানে বাংলাদেশে সিজোফ্রেনিয়াতে আক্রান্ত ব্যাক্তির সংখ্যা প্রায় ১৬ লক্ষ মানুষ। সবচেয়ে দুঃখের বিষয় হলো এখনো পর্যন্ত এই রোগে আক্রান্ত ব্যাক্তিক্র সমাজ ও মানুষ স্বাভাবিক ভাবে গ্রহন করতে পারে না। পাগল বলে ডাকা হয় অপমান-অপদস্থ করা হয়। এবং এটি যে আর ১০ টা ব্রেইনের রোগের মতো একটি রোগ সেটা অধিকাংশ ব্যাক্তি জানেন না বা স্বাভাবিক ভাবে গ্রহন করতে পারেন না। যার ফলশ্রুতিতে এই রোগে আক্রান্ত ব্যাক্তিদের চিকিৎসা টাও করানো হয় না টিক মতো। আরোও দুঃখের বিষয় হলো এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে ৫-১০ শতাংশ আত্নহত্যার পথ বেছে নেন। তবে খুশির ব্যাপার হলো এই রোগের আধুনিক চিকিৎসা রয়েছে। চিকিৎসার মাধ্যমে ২৫ শতাংশ রোগী সম্পূর্ণ আরোগ্য লাভ করেন, আরও ৩৫ শতাংশ স্বাধীনভাবে জীবন যাপন করতে পারেন, আরও ২০ শতাংশ সহায়তা সাপেক্ষে উন্নতি লাভ করেন। মাত্র ১৫ শতাংশ তেমন উন্নতি লাভ না-ও করতে পারেন। এক্ষেত্রে যত আগে চিকিৎসা শুরু করা যায় রোগীর জন্য ভালো।