স্বাভাবিক চিন্তা সবসময় উপকারী এবং প্রয়োজনীয় চিন্তা আপনার সমস্যার সমাধান করতে আপনাকে সাহায্য করে।কিন্তু এই চিন্তা যদি হয় বাড়াবাড়ি ধরনের, অর্থাৎ প্রয়োজন ছাড়াই চিন্তা, তাহলে? এই ‘অতিরিক্ত চিন্তা’য় অনেকে মানসিক সমস্যায়ও পড়েন। ‘বেশি চিন্তা’ মন আর শরীরের মধ্যে তৈরি করে ভারসাম্যহীনতা। যেটা আপনার দৈনন্দিন কাজে কর্মে প্রভাব ফেলে এবং আপনার স্বাভাবিক জীবন যাত্রা ব্যহত হয়। এবং দেখা যায় যে এই অতিরিক্ত চিন্তা একটি চক্রের মতো যতো জোর করে এখান থেকে বের হতে চাইবেন ততই জড়িয়ে যাবেন। এবং আমরা যখন অলস বসে থাকি তখন আমাদের এই চিন্তা বেশি আসে। কথায় আছে “অলস মস্তিষ্ক শয়তানের কারখানা”, মানে হলো অহেতুক চিন্তা মাথায় এসে ভর করে অলস বসে থাকলে।
পরিত্রাণের উপায়
কোনো সমস্যা থেকে বের হওয়ার প্রথম ধাপ হলো সমস্যা চিহ্নিত করা। দুশ্চিন্তা করা একটা স্বাভাবিক প্রক্রিয়া, কিন্তু কখন এই দুশ্চিন্তা অহেতুক এবং অতিরিক্ত হয়ে যাচ্ছে, সেটা বুঝতে শিখুন। বারবার একই বিষয় নিয়ে চিন্তা করা, একই সিদ্ধান্তকে প্রশ্নবিদ্ধ করা—এগুলোই অহেতুক দুশ্চিন্তার লক্ষণ। প্রতিটি মানুষ যেমন আলাদা ঠিক তেমনি তাদের বিভিন্ন পরিস্থিতিতে তাদের প্রতিক্রিয়া ও ভিন্ন। তবে এই প্রতিক্রিয়াকে বস্তুগত ভাবে ২ ভাগে ভাগ করা যায়। যেমনঃ শারিরীক এবং মানসিক।
১। ডিস্ট্রাকশন মেথডঃ যখন অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা হচ্ছে তখন নিজেকে ডিস্ট্রাক্ট করে ফেলুন। আপনার পছন্দের কোন কাজে মনযোগ দেন। যেমনঃ গান শোনা, ঘুরতে যাওয়া, গল্প করা ইত্যাদি।
২। Worry Time (দুশ্চিন্তার নির্দিষ্ট সময়): অহেতুক দুশিন্তা গুলো যখন আসে তখন দেখা যায় যে আমরা এইগুলো কে জোর করে দাবিয়ে রাখতে চাই এবং দেখা যায় চিন্তা গুলো আরো বেশি আসে। এই ক্ষেত্রে ওয়ারি টাইম টেকনিক ব্যবহার করতে পারেন। আপনি দিনের একটি নির্দিষ্ট সময় নির্ধারন করুন এবং ওই সময় ছাড়া অন্য কোন সময় চিন্তা করবেন না। যখন মাথার মধ্যে দুশ্চিন্তা আসছে তখন নিজেকে বলুন, “আপনার ওয়ারি টাইম অমুক সময়, আপনি অবশ্যই চিন্তা করবেন কিন্তু এখন না ওয়ারি টাইম এর সময় করবেন।”
৩। (Behavioural Experiment)আচরনগত পরীক্ষনঃ যে বিষয় নিয়ে দুশ্চিন্তা হচ্ছে বা ভয় কাজ করে সে বিষয়টি সরাসরি পরীক্ষা করে দেখা। এতে করে নেতিবাচক চিন্তা ভুল প্রমানিত হলে পরবর্তীতে আর একই বিষয় নিয়ে দুশ্চিন্তা হবে না। যেমনঃ রাস্তায় বের হলেই আমাকে কুকুর কামড় দিবে। কিন্তু এটি সবসময় সত্যি নয়। এক্ষেত্রে আপনি কাউকে সাথে নিয়ে রাস্তায় বের পরীক্ষা করে দেখা যে কুকুর এমনিতে আপনাকে কামড় দেয় কিনা?
৪। শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়মঃ অহেতুক এবং অতিরিক্ত চিন্তার ফলে অনেক সময় শরীরে এক ধরনের অস্বস্তি বা খারাপ লাগা অনুভুত হয়। এই ক্ষেত্রে শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়ম অনেক কার্যকরী। নাক দিয়ে ৩ সে. ধরে লম্বা একটা নিশ্বাস নেয়া, এরপর সেই নিশ্বাস ৬ সে. ধরে আটকে রাখা, তারপর ৮ সে. ধরে মুখ দিয়ে ধীরে ধীরে ছাড়া। এই ব্যায়ম টি কয়েক বার করতে পারেন দেখবেন আপনার প্রশান্তি লাগছে।
৫। নিয়মিত ব্যয়মঃ নিয়মিত ব্যায়ম করলে স্ট্রেস হরমোন রিলিজ হয়ে যায় এবং শরীর হালকা হয়ে যায়। ফলে অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা কম হয়।
৬। নিজেকে ব্যস্ত রাখুনঃ তাহলে অহেতুক বা অতিরিক্ত চিন্তা করার সময় কম পাবেন। একটা সময় এটি অভ্যাস হয়ে গেলে তখন দুশ্চিন্তা কম হবে।
৭। নিজের চিন্তাকে চ্যালেঞ্জ করাঃ নিজের যে নেতিবাচক চিন্তা গুলো দুশ্চিন্তা হিসেবে দেখা যায় সেগুলোকে পক্ষে ও বিপক্ষে তুলনা করে ইতিবাচক একটি চিন্তা খুঁজে বের করা।
৮। মাইন্ডফুলনেস প্র্যাক্টিস করাঃ এই টেকনিক অনেক কার্যকরী অহেতুক চিন্তা থেকে বের হয়ে আসার জন্য। এই পদ্ধতির মূল বিষয় হলো বর্তমানে থাকা। অর্থাৎ আপনি এই মুহূর্তে যে কাজ টি করছেন শুধু সেখানেই মনোনিবেশ করা। যেমনঃ খাবার খাওয়ার সময় আপনি শুধু খাবার খাওয়ার বিষয়টা তেই মন দিবেন। কিভাবে খাবার মাখাচ্ছেন, কেমন লাগছে, গলা দিয়ে গিলে ফেলেছেন প্রতিটি বিষয় মনযোগ দিয়ে অনুভব করা।
৯। ইতিবাচক মানসিকতা তৈরি করাঃ আমরা আসলে কোন একটি বিষয়ের ফলাফল ভালো হবে নাকি খারাপ হবে সেটি নিয়ে বেশি চিন্তিত থাকি। এই ক্ষেত্রে নেতিবাচক চিন্তা না করে ইতিবাচক চিন্তা করা। আবার কোন নেতিবাচক ঘটনার মধ্যে কোন ইতিবাচকতা থাকলে সেটি দেখার চেষ্টা করা, তাহলে একটা সময় দুশ্চিন্তা করার মানসিকতা দূর হয়ে যাবে।
১০। পারফেক্ট হওয়ার চিন্তা বাদ দিনঃ অতিরিক্ত নির্ভুল হতে গিয়ে আমাদের মধ্যে পরবর্তীতে অহেতুক দুশ্চিন্তা তৈরি হয়। মানুষ ভুল করতে পারে এবং এটি একটি স্বাভাবিক বিষয় সেটিকে গ্রহন করুন।